বিশ্ব বিখ্যাত ব্রান্ড জার্মানির ফ্রেসিনাস ব্রান্ডের স্লেড কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন এখন ময়মনসিংহের নেক্সাস হসপিটালস-এ

ডাঃ মাহমুদ জাভেদ (পরাগ)

মেডিসিন, কিডনী ও হাইপারটেনশন রোগ বিশেষজ্ঞ

এমবিবিএস (ঢাকা), এমডি (নেফ্রোলজি), এফএএসএন (আমেরিকা)
এফএসিপি (ইন্টারনাল মেডিসিন, আমেরিকা)
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কিডনী রোগ বিভাগ
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ

ডাঃ আবু জাফর সালাহউদ্দিন

কিডনী, মেডিসিন ও হাইপারটেনশন বিশেষজ্ঞ

এম.বি.বি.এস (ঢাকা), বি.সি.এস (স্বাস্থ্য)
এম.ডি (নেফ্রোলজী) বি.এস.এম.এম.ইউ (পি.জি. হাসপাতাল)
কিডনী, মেডিসিন ও হাইপারটেনশন বিশেষজ্ঞ
রেজিষ্ট্রার, নেফ্রোলজি বিভাগ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
(এক্স) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

ডায়ালাইসিস একটি বিকল্প রক্ত পরিষ্কার পদ্ধতি। যার মাধ্যমে রক্তের দূষিত ও ক্ষতিকর পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি প্রস্রাব আকারে বের করে দেয়া যায়। সুস্থ মানুষের দেহে কিডনি এমনিতেই এ কাজগুলো করে থাকে কিন্তু যখন কিডনি বিকল হয় বা রক্ত পরিশোধন করার ক্ষমতা হারায় অথবা ক্ষমতা কমে যায়, তখন রক্ত পরিশোধনের জন্য ডায়ালাইসিস করতে হয়। অনেকে মনে করেন, শুধু দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্তদের ডায়ালাইসিস লাগে কিন্তু হঠাৎ করে যে কারো ডায়ালাইসিস লাগতে পারে যদি অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর হয়।সুস্থ মানুষের দেহে খনিজ ও পানির ভারসাম্য বজায় রাখে কিডনি। রক্তকণিকা তৈরির জন্য অতি আবশ্যক ইরাইথ্রোপয়েটিন ও কোলসিট্রায়াল হরমোনও উৎপাদন করে। ডায়ালাইসিস পদ্ধতিতে রক্ত পরিষ্কার হয় কিন্তু হরমোন উৎপাদন হয় না।
প্রতিদিন সুস্থ মানুষের দুটি কিডনি দেড় হাজার লিটার (রক্ত ২৪ ঘণ্টা কিডনির ভেতর দিয়ে বারবার যায় বলে রক্তের মোট পরিমাণ এত বেশি) রক্ত পরিশোধনের কাজ করে। যদি কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে না দিত, তবে মানুষ বাঁচতে পারত না। যদি কারো কিডনি রক্ত পরিশোধনের কাজ করতে না পারে বা যথেষ্ট পরিমাণে করতে ব্যর্থ হয়, তখন ক্ষতিকর বর্জ্য রক্তে জমতে থাকে। যদি এসব পদার্থের পরিমাণ বেশি বেড়ে যায় তবে রোগী ধীরে ধীরে কোমায় চলে যায়। এমনকি মৃত্যুবরণ করে। তাই কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা কিডনির অসুখ হলে অনেক সময় ডায়ালাইসিস অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
সাধারণত কিডনি হঠাৎ করে বিকল হয়ে যায় না। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে হয়। এমনকি একটি কিডনি যদি ঠিক থাকে বা দুটি কিডনিই কিছু না কিছু ঠিক থাকে, তাহলে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সাধারণত কিডনির অর্ধেকের বেশি নষ্ট হলে কিডনি বিকলের কিছু লক্ষণ দেখা যায়। আবার সবার ক্ষেত্রে একই লক্ষণ থাকেও না। নিচের লক্ষণগুলো থাকতে পারে: ➤ অতিরিক্ত দুর্বলতাবোধ বা কাজকর্ম না করলেও শরীর দুর্বল লাগা। বারবার প্রস্রাবের বেগ হওয়া। বিশেষ করে রাতে। যতদিন যায় প্রস্রাবের বেগ ঘন ঘন হয়। ➤ ত্বকে চুলকানি। বমি ও বমি-বমি ভাব। শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া। ➤ ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা পুরুষাঙ্গ উত্থানের সমস্যা। ➤ হাত-পা-পেটে পানি জমা। ➤ প্রস্রাবে রক্ত ও প্রোটিন যাওয়া। ➤ কিছু ক্ষেত্রে হঠাৎ করেও কিডনি বিকল হতে পারে। সাধারণত আঘাতের কারণে এমন হয়। কিডনি বিকল যাদের হয়, তাদের অনেকের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোগও হয়। কারণ কিডনি ইরাইথ্রোপোয়েটিন নিঃসরণ করতে পারে না। তখন রক্তকণিকা তৈরি হতে বাধা পায়।
ডায়াবেটিক রোগী, আক্রান্তদের অর্ধেকেরই কিছু না কিছু মাত্রায় কিডনি অসুখ হয়। ➤ উচ্চ রক্তচাপের রোগী, আক্রান্তদের এক-চতুর্থাংশ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। ➤ গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস বা কিডনির প্রদাহ। ➤ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস। ➤ সিসা দূষণের শিকার। ➤ পেট্রল পাম্পের শ্রমিক বা তেল নিয়ে কাজ করতে হয় এমন মানুষ। ➤ লুপাসের মতো অটো ইমিউন অসুখে আক্রান্ত হলে। ➤ কিডনিতে সরাসরি আঘাত লাগলে। যেমন, সড়ক দুর্ঘটনা। ➤ পাইলোনেফ্রাইটিস বা কিডনিতে ইনফেকশন। ➤ হার্টে সার্জারির ইতিহাস, জন্ডিস, কিছু ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত সেবন। ➤ জন্মগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি। ➤ ইয়োলো ফিভারের রোগী।
সাধারণত ইনফেকশন, এইচআইভি, হেপাটাইটিস, নেফ্রাইটিস, ক্রনিক ইনফেকশন, পলিসিসটিক কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, টিবি (যক্ষ্মা), খাদ্যে ও ফলমূলে ভেজাল, তেজস্ক্রিয়তা, শাক-সবজিতে কীটনাশক ইত্যাদি কারণে কিডনি সম্পূর্ণরূপে বিকল হয়ে যেতে পারে। এছাড়া শিশুর জন্ম থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত কিডনি, ইউরেটর, মূত্রথলি, প্রোস্টেট বা মূত্রনালিতে পাথর, টিউমার বা প্রস্রাব নির্গমনে বাধাগ্রস্ত হলে কিডনি ফুলে যায় এবং ধীরে ধীরে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ➤ মেয়েদের জরায়ু বা ওভারি টিউমারের কারণে প্রস্রাব নির্গমন হতে না পারলে কিডনি বিকল হয়। ➤ খাদ্যনালির বা পেটের ভেতর বড় টিউমার কিডনি ও মূত্রনালিকে বাধাগ্রস্ত করলেও কিডনি নষ্ট হয়। ➤ অতিরিক্ত ব্যথার বড়ি সেবনেও কিডনি নষ্ট হতে পারে।
রক্তের সিরামে ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেলে (স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১.৪ মিলিগ্রাম) কিডনি বিকল হয়ে শরীর ফুলে গেলে। ঘন ঘন শ্বাস হলে। প্রস্রাব একেবারেই কমে গেলে। ইলেকট্রোলাইট অসমতা হলে। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে। কিডনি ফেইলিওর হলে।