Synthetic VS Mineral engine oil: সিনথেটিক নাকি মিনারেল কোন ইঞ্জিন অয়েল গাড়ির জন্য সেরা

Synthetic vs Mineral Engine Oil

আপনার গাড়ির ইঞ্জিনের দীর্ঘস্থায়ী কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সঠিক ইঞ্জিন অয়েল (Engine oil) নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান বাজারে প্রধানত দুটি ধরনের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়: সিনথেটিক অয়েল এবং মিনারেল অয়েল। প্রতিটি অয়েলের নিজস্ব গুণাবলী, সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। সিনথেটিক অয়েল উচ্চ কার্যক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা এবং চরম তাপমাত্রায় স্থিতিশীলতার জন্য পরিচিত। অন্যদিকে, মিনারেল অয়েল সুলভ এবং সাধারণ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।

এই ব্লগপোস্টে আমরা সিনথেটিক এবং মিনারেল অয়েলের মধ্যে পার্থক্য, তাদের গুণাগুণ, সুবিধা-অসুবিধা এবং কার্যকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এছাড়াও, আমরা আলোচনা করবো কোন পরিস্থিতিতে কোন অয়েল ব্যবহার করা উচিত এবং সঠিক ইঞ্জিন অয়েল নির্বাচনের পদ্ধতি।

আপনার গাড়ির ইঞ্জিনকে দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকর রাখতে এই ব্লগপোস্টটি আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।

আপনার দেহের জন্য রক্ত যেমন, ইঞ্জিনের জন্য ইঞ্জিন অয়েল তেমন।

রক্তের প্রয়োজনীয় প্যারামিটার এদিক সেদিক হলে যেমন আপনি অসুস্থ হয়ে যান, তেমনি ইঞ্জিন অয়েলের প্রয়োজনীয় গুনাগুণ ঠিক না থাকলে আপনার গাড়ির ইঞ্জিনের বারটা বাজতে সময় লাগবেনা।

তাই ভালোমানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Screenshot 2024 08 24 120742

ভালোমানের ইঞ্জিন অয়েলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণাগুণ সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলঃ

চলন্ত বা ঘূর্ণায়মান মেটাল পার্টসের মাঝে ইঞ্জিন অয়েল (Engine oil) একটি পাতলা পিচ্ছিল আবরণ তৈরী করে ও একের সাথে অপরের ঘর্ষণ প্রতিরোধ করে। এভাবে মূল্যবান ইঞ্জিন পার্টসকে ঘর্ষণজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

ইঞ্জিন চলার দরুন ইঞ্জিনের বিভিন্ন স্থানে যে তাপ উৎপন্ন হয় ইঞ্জিন অয়েল তা ছড়িয়ে দিয়ে বা অন্য স্থানে পরিবহন করে ঐ স্থানসমূহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে। এভাবে ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের পার্টস সমূহকে উচ্চ তাপমাত্রাজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

ইঞ্জিন অয়েলের অন্যতম প্রধান গুণাবলীর মধ্যে একটি হল, এটি ইঞ্জিনের পার্টসসমুহে ক্ষতিকর কোন উপাদান জমতে বাধা দেয় ও তলানি জমতে দেয়না। ইঞ্জিনের পার্টস সমূহ পরিষ্কার রাখে, ইঞ্জিন অয়েলের সঞ্চালন লাইন ব্লক হতে দেয়না এবং ইঞ্জিনের পারফর্মেন্স ঠিক রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ইঞ্জিন অয়েলে ক্ষয়রোধকারী বিশেষ উপাদান মিশ্রিত থাকে যা ধাতব পার্টস সমূহকে মরিচা থেকে রক্ষা করে এবং ক্ষয়রোধ করে। এই উপাদান সমূহ সঠিক পরিমাণে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আমাদের দেশের মত যেসব দেশে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশী থাকে।

ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েলে কিছু বিশেষ উপাদান মিশ্রিত থাকে যা ইঞ্জিনের সিল সমূহ কন্ডিশনিং করে ও সিলসমূহ ভালো রাখে। এরফলে সহসা সিল লিক হওয়া প্রতিরোধ করে এবং ইঞ্জিনের আভ্যন্তরীন অয়েল প্রেশার সঠিক মাত্রায় রেখে ইঞ্জিনের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।

সঠিক ঘনত্বের ও সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের আভ্যন্তরীন পার্টসসমূহের ঘর্ষণ কমিয়ে বাড়তি জ্বালানী খরচের হাত থেকে বাঁচায়।

আধুনিক ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল (Engine oil) গাড়ির ধূয়া নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ ফরমুলেশনে তৈরী করা হয়। তা ক্ষতিকর ধূয়া নিঃসরণ কমিয়ে দেয় এবং ইঞ্জিনে কার্বন জমা হওয়া কমিয়ে ইঞ্জিন ভালো রাখতে সহায়তা করে।

ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েলের ব্যবহার ও সঠিক সময়ে তা চেঞ্জ করলে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স অনেক ভালো থাকে এবং ইঞ্জিনের লাইফ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। সঠিক ইঞ্জিন অয়েল অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষয় হতে ইঞ্জিন পার্টস কে রক্ষা করে এবং অনেক ব্যয়বহুল রিপেয়ার থেকে বাঁচায়।

ভালো ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের পাওয়ার আউটপুট ও পারফর্মেন্স অটুট রেখে ড্রাইভিং এক্সপেরিয়েন্স আরামদায়ক করে।

ইঞ্জিন অয়েল সাধারণত তিন ধরনের হয়: সিনথেটিক অয়েল, মিনারেল অয়েল এবং ব্লেন্ডেড অয়েল। প্রতিটি অয়েলের নিজস্ব গুণাবলী, সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে যা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন পারফরম্যান্স প্রদান করে।

গুণাগুণ: সিনথেটিক অয়েল কেমিক্যালভাবে তৈরি হয় এবং এর রাসায়নিক গঠন খুবই সুনির্দিষ্ট। এটি উচ্চতাপমাত্রায় স্থিতিশীল থাকে এবং অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায়ও কার্যকর থাকে। সিনথেটিক অয়েল হাইড্রোকার্বন মিশ্রণ দ্বারা গঠিত যা ইঞ্জিনের জন্য খুবই উপযোগী।

সুবিধা:

  1. উচ্চ তাপমাত্রায় স্থায়িত্ব: সিনথেটিক অয়েল অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম। এটি ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  2. নিম্ন তাপমাত্রায় কার্যকারিতা: শীতল আবহাওয়ায় সিনথেটিক অয়েল জমে যায় না এবং ইঞ্জিন সহজে স্টার্ট হয়।
  3. দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা: সিনথেটিক অয়েল ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশে কম ঘর্ষণ সৃষ্টি করে, ফলে ইঞ্জিনের আয়ু বৃদ্ধি পায়।
  4. অক্সিডেশন প্রতিরোধ: সিনথেটিক অয়েল অক্সিডেশন এবং তাপমাত্রার ব্রেকডাউন থেকে ইঞ্জিনকে সুরক্ষিত রাখে।
  5. উন্নত জ্বালানি সাশ্রয়: এটি জ্বালানির দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং ফুয়েল খরচ কমায়।

অসুবিধা:

  1. উচ্চ মূল্য: সিনথেটিক অয়েল সাধারণত মিনারেল অয়েলের তুলনায় বেশি দামি।
  2. পুরানো ইঞ্জিনের সাথে সামঞ্জস্য: কিছু পুরাতন ইঞ্জিনের সাথে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করা গেলে অয়েল লিক হতে পারে।

গুণাগুণ: মিনারেল অয়েল প্রাকৃতিকভাবে নিষ্কাশিত হয় এবং শোধনের মাধ্যমে তৈরি হয়। এটি প্রধানত পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক এবং এতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক যৌগ থাকে।

সুবিধা:

  1. সুলভ মূল্য: মিনারেল অয়েল সাধারণত সিনথেটিক অয়েলের তুলনায় কম দামি, তাই এটি অধিকাংশ গাড়ি ব্যবহারকারীদের জন্য সাশ্রয়ী।
  2. পুরাতন ইঞ্জিনের সাথে সামঞ্জস্য: মিনারেল অয়েল সাধারণত পুরাতন ইঞ্জিনের সাথে ভালোভাবে কাজ করে এবং অয়েল লিকের সম্ভাবনা কম।
  3. সহজলভ্য: এটি বাজারে সহজেই পাওয়া যায়।

অসুবিধা:

  1. উচ্চ তাপমাত্রায় কম কার্যকারিতা: মিনারেল অয়েল উচ্চ তাপমাত্রায় কার্যকারিতা হারাতে পারে এবং তাপ ব্রেকডাউন হতে পারে।
  2. অক্সিডেশন এবং ক্ষয়: মিনারেল অয়েল অক্সিডেশনের ফলে দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ইঞ্জিনের আয়ু কমিয়ে দেয়।
  3. প্রায়ই পরিবর্তনের প্রয়োজন: মিনারেল অয়েল দ্রুত ময়লা জমে যাওয়ার কারণে বেশি ঘন ঘন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়।

গুণাগুণ: ব্লেন্ডেড অয়েল সিনথেটিক এবং মিনারেল অয়েলের মিশ্রণ। এটি দুটি অয়েলের গুণাবলীর সমন্বয়ে তৈরি হয়।

সুবিধা:

  1. মধ্যম মূল্য: ব্লেন্ডেড অয়েল সাধারণত সিনথেটিক অয়েলের তুলনায় সস্তা এবং মিনারেল অয়েলের তুলনায় কিছুটা দামি।
  2. উচ্চ কার্যকারিতা: ব্লেন্ডেড অয়েল সিনথেটিক অয়েলের কিছু সুবিধা প্রদান করে, যেমন উচ্চ তাপমাত্রায় স্থায়িত্ব এবং নিম্ন তাপমাত্রায় কার্যকারিতা।
  3. সুরক্ষা: এটি ইঞ্জিনকে কিছুটা বেশি সুরক্ষা দেয় এবং ইঞ্জিনের আয়ু বৃদ্ধি করে।

অসুবিধা:

  1. মিনারেল অয়েলের কিছু সীমাবদ্ধতা: ব্লেন্ডেড অয়েলে কিছু মিনারেল অয়েলের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, যেমন অক্সিডেশন এবং ক্ষয়।
  2. খরচ: মিনারেল অয়েলের তুলনায় বেশি দামি।

নতুন ইঞ্জিনের জন্য সিনথেটিক অয়েল বেশি উপযোগী, কারণ এটি ইঞ্জিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং উচ্চ তাপমাত্রায় স্থিতিশীলতা প্রদান করে।

পুরাতন ইঞ্জিনের জন্য মিনারেল অয়েল অথবা ব্লেন্ডেড অয়েল বেশি উপযোগী। মিনারেল অয়েল পুরাতন ইঞ্জিনের সাথে ভালোভাবে কাজ করে এবং অয়েল লিকের সম্ভাবনা কম।

চরম ঠান্ডা বা গরম আবহাওয়ার জন্য সিনথেটিক অয়েল সর্বোত্তম, কারণ এটি চরম তাপমাত্রায়ও কার্যকর থাকে।

  1. গাড়ির ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশনা অনুসরণ করুন: গাড়ির ম্যানুফ্যাকচারার সাধারণত কোন অয়েল ব্যবহার করা উচিত তা নির্দেশ করে।
  2. ইঞ্জিনের অবস্থা বিবেচনা করুন: ইঞ্জিন যদি পুরানো হয় তবে মিনারেল বা ব্লেন্ডেড অয়েল উপযুক্ত হতে পারে।
  3. আবহাওয়ার বিবেচনা: চরম আবহাওয়ার জন্য সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করা উচিৎ।
  4. ব্যবহারের ধরন: গাড়ি যদি অধিক দূরত্বে চলাচল করে এবং উচ্চ পারফরম্যান্স প্রয়োজন হয় তবে সিনথেটিক অয়েল উপযুক্ত হতে পারে।

গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ যা ইঞ্জিনের দীর্ঘস্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের ধাপসমূহ নিম্নরূপ:

  1. প্রস্তুতি: প্রথমে গাড়ি একটি সমতল স্থানে পার্ক করুন এবং ইঞ্জিন বন্ধ করুন। ইঞ্জিন একটু গরম থাকলে অয়েল সহজে বের হবে, তাই ইঞ্জিনকে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হতে দিন। প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন নতুন অয়েল, অয়েল ফিল্টার, রেঞ্চ, অয়েল প্যান, ফানেল এবং গ্লাভস প্রস্তুত করুন।
  2. পুরানো অয়েল নিষ্কাশন: গাড়ি জ্যাক দিয়ে উঁচু করুন এবং নিরাপত্তা স্ট্যান্ড ব্যবহার করুন। অয়েল প্যানটি ইঞ্জিনের নিচে রাখুন। রেঞ্চ ব্যবহার করে ড্রেন প্লাগ খুলুন এবং পুরানো অয়েল বের হতে দিন। সব অয়েল বের হয়ে গেলে ড্রেন প্লাগ আবার টাইট করে লাগান।
  3. অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন: পুরানো অয়েল ফিল্টার খুলে ফেলুন এবং নতুন ফিল্টার লাগানোর আগে এর গ্যাসকেট তেল দিয়ে মাখিয়ে নিন। এরপর নতুন ফিল্টারটি সঠিকভাবে লাগিয়ে দিন।
  4. নতুন অয়েল যোগ: ইঞ্জিনের উপরের অংশে অয়েল ফিল ক্যাপ খুলে ফানেল ব্যবহার করে নতুন অয়েল ঢালুন। গাড়ির ম্যানুয়াল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ অয়েল ব্যবহার করুন। অয়েল ঢালার পর ফিল ক্যাপ আবার লাগিয়ে দিন।
  5. পরীক্ষা: ইঞ্জিন চালু করুন এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। অয়েল লেভেল চেক করে নিশ্চিত করুন সঠিক মাত্রায় আছে। অয়েল লিক হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।

ইঞ্জিন অয়েলের ভিসকোসিটি (SAE গ্রেড): ভিসকোসিটি হলো অয়েলের ঘনত্ব বা প্রবাহমানতা নির্দেশক। SAE (Society of Automotive Engineers) গ্রেড ইঞ্জিন অয়েলের ভিসকোসিটি নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, 5W-30 গ্রেডে ‘5W’ মানে শীতকালীন (Winter) ভিসকোসিটি, যা নিম্ন তাপমাত্রায় অয়েলের প্রবাহমানতা নির্দেশ করে এবং ’30’ গ্রীষ্মকালীন ভিসকোসিটি, যা উচ্চ তাপমাত্রায় অয়েলের কর্মক্ষমতা নির্দেশ করে।

API রেটিংস: American Petroleum Institute (API) রেটিং ইঞ্জিন অয়েলের গুণমান ও কর্মক্ষমতা নির্দেশ করে। API এর রেটিং দুটি বর্ণমালার সমন্বয়ে তৈরি হয়, যেমন API SN, যেখানে ‘S’ মানে স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিন (পেট্রোল) এবং ‘N’ ইঞ্জিন অয়েলের মান নির্দেশ করে।

ACEA রেটিংস: Association des Constructeurs Européens d’Automobiles (ACEA) রেটিংস ইউরোপীয় গাড়ির জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ইঞ্জিন অয়েলের গুণমান, পরিবেশগত প্রভাব ও কর্মক্ষমতা নির্দেশ করে। ACEA রেটিং তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে: A/B (পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিন), C (লো-স্যাপস), এবং E (হেভি-ডিউটি ডিজেল ইঞ্জিন)।

সংরক্ষণ ও ব্যবহার বিধি: ইঞ্জিন অয়েল সংরক্ষণ করতে শীতল, শুষ্ক ও সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখতে হবে। অয়েল ব্যবহারের আগে এর উপযুক্ততা যাচাই করুন।

গাড়ির ইঞ্জিন অয়েলের ভবিষ্যত নিয়ে বেশ কিছু উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন অপেক্ষা করছে, যা ইঞ্জিন প্রযুক্তি ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতের ইঞ্জিন অয়েল আরো উন্নত ও পরিবেশবান্ধব হবে।

উন্নত প্রযুক্তি: ইঞ্জিন অয়েলের উন্নতিতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হতে পারে। ন্যানোপার্টিকল সমৃদ্ধ অয়েল ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণ কমিয়ে কর্মক্ষমতা ও জ্বালানী সাশ্রয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।

পরিবেশবান্ধব অয়েল: পরিবেশ দূষণ কমাতে বায়োডিগ্রেডেবল অয়েল এবং কম ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস (VOC) সমৃদ্ধ অয়েলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। এই অয়েলগুলো পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমাবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরতা হ্রাস করবে।

ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি: ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে এই গাড়িগুলির জন্য বিশেষ ধরনের অয়েলের প্রয়োজন হবে। এই অয়েলগুলো উচ্চ তাপমাত্রায় স্থিতিশীল এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে।

ডিজিটাল মনিটরিং: ভবিষ্যতে, ইঞ্জিন অয়েলের অবস্থান ও মান পরিমাপ করার জন্য ডিজিটাল সেন্সর এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এটি ইঞ্জিন অয়েলের কার্যকারিতা উন্নত করবে এবং সঠিক সময়ে অয়েল পরিবর্তন নিশ্চিত করবে।

গাড়ির ইঞ্জিন অয়েলের ভবিষ্যত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা ইঞ্জিনের কার্যকারিতা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করবে।

গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কে অনেকের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে, যা ইঞ্জিনের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এখানে এমন কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা এবং তাদের বাস্তবতা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

ভুল ধারণা: সমস্ত ইঞ্জিন অয়েল একই রকম

বাস্তবতা: ইঞ্জিন অয়েল বিভিন্ন ধরনের ও মানের হয়ে থাকে, যেমন সিনথেটিক, মিনারেল এবং ব্লেন্ডেড অয়েল। প্রতিটি অয়েলের নিজস্ব গুণাবলী, সুবিধা এবং নির্দিষ্ট ব্যবহার উপযোগিতা রয়েছে। সঠিক অয়েল নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভুল ধারণা: ইঞ্জিন অয়েল যত বেশি ঘন, তত ভালো

বাস্তবতা: অয়েলের ভিসকোসিটি বা ঘনত্ব নির্ভর করে ইঞ্জিনের ধরন এবং আবহাওয়ার উপর। উচ্চ ভিসকোসিটির অয়েল সব সময় সেরা নয়। গাড়ির ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক ভিসকোসিটির অয়েল ব্যবহার করা উচিত।

ভুল ধারণা: সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করা সবসময় ব্যয়বহুল

বাস্তবতা: যদিও সিনথেটিক অয়েলের প্রাথমিক মূল্য বেশি হতে পারে, তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং উচ্চ কার্যকারিতা প্রদান করে। এর ফলে কম ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে খরচ সাশ্রয়ী হতে পারে।

ভুল ধারণা: ইঞ্জিন অয়েল শুধুমাত্র ইঞ্জিনকে লুব্রিকেট করে

বাস্তবতা: ইঞ্জিন অয়েলের প্রধান কাজ লুব্রিকেশন হলেও, এটি তাপ নিয়ন্ত্রণ, ইঞ্জিন পরিষ্কার রাখা এবং ক্ষয় প্রতিরোধের কাজও করে। তাই ইঞ্জিন অয়েল সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে ইঞ্জিনের সামগ্রিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যায়।

ভুল ধারণা: পুরাতন অয়েল পুরোপুরি কালো হলে তা পরিবর্তন করতে হবে

বাস্তবতা: অয়েলের রঙ পরিবর্তন মানেই তা পরিবর্তনের সময় হয়েছে এমন নয়। এটি নির্ভর করে অয়েলের মান, মাইলেজ এবং ব্যবহার পরিস্থিতির উপর। গাড়ির ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত চেক করে অয়েল পরিবর্তন করা উচিত।

ভুল ধারণা: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে

বাস্তবতা: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ প্রতিটি ব্র্যান্ডের অয়েলের ফর্মুলেশন ভিন্ন হতে পারে। এটি ইঞ্জিনের কার্যকারিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এই ভুল ধারণাগুলো থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক জ্ঞান ও ব্যবহার নিশ্চিত করলে আপনার গাড়ির ইঞ্জিন দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর থাকবে।

ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের ঘর্ষণ কমায়, তাপ নিয়ন্ত্রণ করে, এবং ময়লা ও ধুলোবালি পরিষ্কার রাখে। সময়ের সাথে, অয়েল তার কার্যকারিতা হারায় এবং ময়লা জমে যায়, ফলে ইঞ্জিনের ক্ষতি হতে পারে। নিয়মিত অয়েল পরিবর্তন ইঞ্জিনের কার্যকারিতা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।

ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের সময়সীমা নির্ভর করে গাড়ির মডেল, ব্যবহৃত অয়েলের ধরন, এবং ড্রাইভিং কন্ডিশনের উপর। গাড়ির ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশিকা মেনে চলা সর্বদা সর্বোত্তম।

ভিসকোসিটি বা SAE গ্রেড ইঞ্জিন অয়েলের ঘনত্ব এবং প্রবাহমানতা নির্দেশ করে। সঠিক ভিসকোসিটি ইঞ্জিনের কার্যকারিতা এবং সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, 5W-30 অয়েল শীতকালে (-W) নিম্ন তাপমাত্রায় তরল থাকবে এবং গ্রীষ্মকালে (30) উচ্চ তাপমাত্রায় কার্যকর থাকবে। আপনার গাড়ির ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশিকা অনুযায়ী সঠিক ভিসকোসিটি নির্বাচন করা উচিত।

API (American Petroleum Institute) এবং ACEA (Association des Constructeurs Européens d’Automobiles) রেটিংস ইঞ্জিন অয়েলের মান ও কার্যকারিতা নির্দেশ করে। API রেটিং দুটি অক্ষরের সমন্বয়ে তৈরি হয়, যেমন API SN, যা পেট্রোল ইঞ্জিনের জন্য উপযুক্ত। ACEA রেটিং তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়: A/B (পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিন), C (লো-স্যাপস), এবং E (হেভি-ডিউটি ডিজেল ইঞ্জিন)। এই রেটিংস অনুসরণ করে সঠিক অয়েল নির্বাচন করা উচিত।

আপনার গাড়ির ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশিকা অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল নির্বাচন করা উচিত। এটি সাধারণত গাড়ির ম্যানুয়ালে উল্লেখ থাকে। যদি আপনার গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট অয়েল প্রস্তাবিত থাকে, তবে সেই অয়েল ব্যবহার করা সর্বদা সর্বোত্তম।

উত্তর: অয়েল পরিবর্তনের সময়সীমা নির্ভর করে মাইলেজ, ড্রাইভিং কন্ডিশন, এবং ব্যবহৃত অয়েলের উপর। অনেক আধুনিক গাড়িতে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের জন্য ইন্ডিকেটর লাইট থাকে। এছাড়া, অয়েল লেভেল ও তার রঙ নিয়মিত চেক করা উচিত। যদি অয়েল ময়লা বা কালো হয়ে যায়, তাহলে পরিবর্তন করার সময় এসেছে।

উত্তর: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ প্রতিটি ব্র্যান্ডের অয়েলের ফর্মুলেশন ভিন্ন হতে পারে। এটি ইঞ্জিনের কার্যকারিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই একটি ব্র্যান্ড ও নির্দিষ্ট মানের অয়েল ব্যবহার করাই ভালো।

সিনথেটিক অয়েল এবং মিনারেল অয়েল উভয়ই গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের গুণাবলী, সুবিধা এবং ব্যবহার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। সিনথেটিক অয়েল উচ্চ তাপমাত্রায় স্থিতিশীল, নিম্ন তাপমাত্রায় কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আধুনিক ও উচ্চ পারফরম্যান্স ইঞ্জিনের জন্য আদর্শ। এটি দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং ইঞ্জিনের ক্ষয় কমিয়ে দেয়। তবে, এর মূল্য সাধারণত বেশি হয়, যা কিছু ব্যবহারকারীর জন্য একটি বিষয় হতে পারে।

অন্যদিকে, মিনারেল অয়েল প্রাকৃতিকভাবে নিষ্কাশিত এবং সস্তা, যা পুরানো ইঞ্জিন বা কম তাপমাত্রায় চালিত ইঞ্জিনের জন্য উপযুক্ত। এটি সহজলভ্য এবং প্রাথমিক খরচ কম হওয়ায় অনেকের পছন্দ। তবে, এটি তাপমাত্রায় স্থিতিশীলতা কম এবং ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে।

আপনার গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য সঠিক অয়েল নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশিকা অনুযায়ী এবং আপনার ড্রাইভিং কন্ডিশন বিবেচনা করে সঠিক অয়েল নির্বাচন করুন। সঠিক অয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার ইঞ্জিনের আয়ু বৃদ্ধি করতে এবং সর্বোচ্চ কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে পারবেন। যেকোনো সন্দেহের ক্ষেত্রে, পেশাদার মেকানিকের পরামর্শ গ্রহণ করা সবসময়ই ভালো।

Main Menu